বেশিরভাগ রাস্তার পাশেই সাইনবোর্ডে একটা লেখা দেখতে পাওয়া যায় এখানে হোন্ডা পার্কিং নিষেধ। এখন প্রশ্ন হল এই হুন্ডা দিয়ে আসলে কী বোঝানো হয়েছে? হোন্ডা কোম্পানির মোটরসাইকেল পার্কিং নিষেধ নাকি সকল কোম্পানির মোটরসাইকেল পার্কিংই নিষেধ? উত্তরটা খুব সহজ এখানে সব কোম্পানির মোটরসাইকেল কেই বোঝানো হয়েছে হোন্ডা দিয়ে। এভাবে বহু বছর ধরে মোটরসাইকেল মানে হোন্ডা কে বোঝানো হয় বিভিন্ন দেশে। আর জিনি এই জনপ্রিয় যান টির ব্রান্ড তৈরি করেছিলেন তার নাম (সইচিরো হোন্ডা)
কে এই সইচিরো হোন্ডা? কিভাবে বা হোন্ডা কোম্পানিকে সবার মুখে মুখে নিয়ে আসলো? জানতে ইচ্ছা হচ্ছে? তাহলে আজকে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার আমন্ত্রণ করা হলো। কারণ আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনিও হোন্ডা কোম্পানী সম্পর্কে এ টু জেড সবকিছু জানতে পারবেন, তো চলুন বেশি কথা না বললে আজকের মূল আলোচনা শুরু করি।
তো চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক সইচিরো হোন্ডা কে? এবং কিভাবে হোন্ডা কোম্পানি এত জনপ্রিয় হলো, সেই সম্পর্কে:
১৯০৬ সালের ১৭ নভেম্বর জাপানের পূর্ব পাহাড়ের নিচে ছোট্ট কমিও গ্রামে একজন কামার ও আরেক জন তাতির ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন (সইচিরো হোন্ডা)।সইচিরো এর মা মিকা হোন্ডা ছিলেন একজন wever এবং বাবা ছিলেন জিহাহি হুন্ডা ছিলেন একজন ব্ল্যাক স্মিথ যিনি তাঁর কাজের পাশাপাশি বাইসাইকেল ও মেরামত করতেন। ছোটবেলা থেকেই সইচিরো হোন্ডা তার বাবার সাইকেল মেরামতের কাজে সহায়তা করতেন। চঞ্চল স্বভাবের হোন্ডার স্কুলের বাঁধাধরা নিয়মকানুন ভালো লাগতো না। লেখাপড়ায় ও তেমন ভাল ছিলনা সইচিরো হোন্ডা, তাই জাপানের নিয়ম অনুযায়ী তাদের রেজাল্ট কার্ড অভিভাবকের কাছে পাঠানো হলে, পরিবারের শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের সাইকেলের গ্যারেজ এর সরঞ্জাম থেকেই পারিবারিক সিল বানানোর বন্দোবস্ত করে ফেললেন। তবে সাময়িকভাবে পানিশমেন্ট এর হাত থেকে রক্ষা পেলেও, পরবর্তীতে বাবার হাতে ধরা পড়ে তাকে ভালোই উত্তম-মধ্যম খেতে হয়েছিল।
১৯২২ সালে স্কুল শেষ করে হোন্ডা চাকরি শুরু করেন রাজধানী টোকিওর একটি গাড়ি মেরামতের দোকান, আরটুসুকায়ের সহকারি হিসেবে। একদিকে বয়স অনেক কম আবার অন্যদিকে কোন অভিজ্ঞতা নেই , তাই তার কাজ শুধু ধোয়া মোছা পরিষ্কার করা এবং স্টাফদের খাওয়া-দাওয়া তৈরি করা। তবে হোন্ডা মালিকের অনুমতি নিয়েই তাদের ই অন্য একটি দোকানে রেসিং কার ডিজাইনের সহযোগিতার কাজ করতে থাকে রাত জেগে। ১৯২৩ সালে এক ভূমিকম্পে দোকানের গ্যারেজে আগুন ধরলে তিনি একাই অতি দামি লাক্সেরিয়াস তিনটি রেসিং কার রক্ষা করে মালিকের নজরে পড়ে যায়। তারপর থেকে মালিকের সঙ্গে সরাসরি রেসিং কার ডিজাইনের সহযোগিতার কাজ করতে থাকে সইচিরো হোন্ডা।
১৯২৪ সালে জাপান রেসিং কার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারী টিমে মেকানিক হিসেবে কাজ করেন হোন্ডা। পরবর্তী পাঁচ বছরে হোন্ডা তার কাজের দক্ষতাই আরটোশুকায় কে টোকিওর একটি জনপ্রিয় সার্ভিস সেন্টারে পরিণত করেন। সার্ভিস সেন্টারটির বেশ কয়েকটি শাখা খোলা হয় এবং এর একটি শাখায় প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন ২১ বছর বয়সী হোন্ডা। কিন্তু সইচিরো হোন্ডার স্বপ্ন ছিল আরও বড় হওয়ার আর তাই পাশাপাশি নিজের সব জমানো টাকা খরচ করে এমনকি স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে গাড়ির পিস্টন বানানো শুরু করে। কিন্তু তার বানানো গাড়ির পিস্টন গুলো মানের দিক থেকে তেমন ভালো ছিল না, তাই তিনি উপলব্ধি করলেন তার কারিগরি জ্ঞান আরো বাড়ানো দরকার, আর তাই সইচিরো হোন্ডা সে সময়ে টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হয়ে যান।নিজের নলেজ আরো ইম্প্রুভ করতে সইচিরো হামামাতসো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।
১৯৩৬ সালের দিকে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা সইচিরো হোন্ডার একটি হাত ভেঙে দেয় এবং হাসপাতালে শুয়ে থেকে তিনি দুইটা খারাপ সংবাদ শুনতে পান। প্রথমটি হলো টয়োটা কোম্পানিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো তার এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ৩০ হাজার পিস্টন এর মধ্যে মাত্র তিনটি কোয়ালিটি কন্ট্রোল এ পাশ করে। এবং দ্বিতীয় খবরটি হলো হোন্ডা যে টেকনিক্যাল স্কুলে পড়তেন সেখান থেকে অব্যাহতি দেয়ার খবর আসে। তবে তিনি ভেঙে না পড়ে সুস্থ হওয়ার পর ১৯৩৭ সালে নিজেই টোকাইছিকি নামে একটি কোম্পানি দিয়ে নতুন উদ্যমে গাড়ির পিস্টন বানানো শুরু করেন এবং কোয়ালিটি ভালো করে সেই টয়োটা কোম্পানি তেই সরবরাহ করতে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শুধুমাত্র টয়োটা কোম্পানিতেই প্রায় ৪০ শতাংশ পিস্টন সাপ্লাই করেন সইচিরো হোন্ডা , কিন্তু ১৯৪৫ সালের যুদ্ধের শেষের দিকে তার কারখানায় শহরের আমেরিকার বিমান বাহিনীর বোমা বিধ্বস্ত হলে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হন হোন্ডা। ফলে তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি টয়োটা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন মাত্র সাড়ে চার লাখ ইয়েনে। এরপর প্রায় বছর খানেক বেকার থাকেন তিনি।
যেভাবে শুরু হল বিশ্বসেরা হোন্ডার
বিরতি শেষে সেই অর্থ দিয়ে ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে হোন্ডা টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭০ স্কয়ারফীটের ছোট একটি স্টুডিওতে ১২ জন কর্মী সইচিরো হোন্ডা two strokes 50 cc tohatsu war surplus radio generator engine দিয়ে মোটরাইশড বাইসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার করতে শুরু করেন। নতুন এই মোটরসাইড বাইসাইকেলটি তাৎক্ষণিকভাবে বেশি পপুলার হলে প্রচুর অর্ডার আসতে থাকে থাকে এবং ইঞ্জিনের স্টক ফুরিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সইচিরো হোন্ডা নিজেই মোটরসাইকেলের জন্য অরিজিনাল ইঞ্জিন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।১৯৪৬ সালে হোন্ডা প্রতিষ্ঠা করেন হোন্ডা টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট। দুই বছর পর সেটাকে হোন্ডা মোটর কোম্পানি তে রূপান্তর করেন, তিনি একটি সাধারণ বাইসাইকেলে ছোট্ট একটি ইঞ্জিন লাগিয়ে তৈরি করেন হোন্ডা কোম্পানির প্রথম মোটরসাইকেল। যার তেলের ট্যাংকি ছিল ছোট্ট একটি পানির বোতল দিয়ে তৈরি। সে সময়ে জাপানে হোন্ডার উদ্ভাবনী শক্তি আর পরিশ্রমে বানানো চোচো নামক ১৫০০ টি বাইক খুব দ্রুতই বিক্রি করা যায়। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে হোন্ডা প্রথম পুরোপুরি নতুন ধরনের মোটরসাইকেল তৈরি করেন এরপর হোন্ডা কোম্পানি বিশ্বের প্রায় ২০০ টি বাইক উৎপাদনকারী কোম্পানি এবং জাপানের ৫০ টি কোম্পানির মধ্যে তাদের উচ্চ মানের মোটরসাইকেল দিয়ে প্রথম সারিতে চলে আসে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৪ সালের মধ্যেই হোন্ডা সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল মানুফাচার কম্পানি তে পরিণত হয়।
তবে হুনডার প্রথম ফ্রেম ও ইঞ্জিন সহ পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেলটি ছিল ১৯৪৯ সালে রিলিজ কৃত ডি টাইপ ড্রিম নামের মোটরসাইকেলটি। ১৯৬৫ সালে কোম্পানিটি মোটরসাইকেল এর পাশাপাশি পাওয়ার প্রডাক্টস এর বিজনেস শুরু করে, যেখানে মূলত কৃষি কাজের জন্য এইস টাইপ ফার্মিং ইঞ্জিন, ও পরবর্তীতে এফ ওয়ান ফিফটি টিলার ইন টিডিউস করা হয়। ১৯৫৮ সালে কোম্পানিটি তাদের আরেক সফল বাইকার মডেল সুপার কাপ লঞ্চ করেন। ১৯৬৯ সালে হোন্ডা তাদের বিজনেস এক্সপ্রেশন শুরু করলে আমেরিকার লস এঞ্জেলসে আমেরিকান হোন্ডা মটর কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৬০ সালে কোম্পানি টি তাদের একটি ইনডিপেন্ডেন্ট এনডিটি হিসেবে জাপানের Saitama pressure এ হোন্ডা আরএনডি কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। অন্যদিকে ১৯৮২ সালে কোম্পানিটি বেলজিয়ামে তাদের প্রথম ওভারসিস প্রোডাকশন প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করে এবং মোটরসাইকেল প্রোডাকশন শুরু করে। মোটরসাইকেল ও পাওয়ার প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার করার পাশাপাশি, সে বছরেই হন্ডা অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতেও যুক্ত হয়। এবং তাদের প্রথম স্পোর্টস কার এস ৫০০ রিলিজ করা হয়। এর পরের বছরেই টি থ্রি সিক্সটি মডেলের মিনি ট্রাক রিলিজ করে হোন্ডা। ১৯৬৪ সাল নাগাদ হোন্ডা মটর কোম্পানি লিমিটেড বিশ্বের সবচাইতে বড় মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি হয়ে ওঠে। এছাড়াও সেই বছরেই হোন্ডা প্রথমবারের মতো ফোর স্টক আউটবোর্ড মেরিন ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচার করতে শুরু করে। এবং ১৯৬৭ সাল নাগাদ আমেরিকান মার্কেটেও হোন্ডার মেরিন ইঞ্জিন intiduce করে।
এদিকে ১৯৬৯ সালে রিলিজ হওয়া হোন্ডা সিবি সেভেন ফিফটি মডেলের মোটরসাইকেলটি, তৎকালীন men stream মোটরসাইকেল মার্কেটে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে সক্ষম হয়। পরের কয়েক দশক ধরে হোন্ডা প্রোডাক্ট লাইফ এক্সপানশন ও প্রোডাকশনের দিকে ফোকাস করেন, এবং বিশ্বের অনেক দেশে নিজেদের অপারেশন এবং প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট করতে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে কোম্পানিটি বিশ্বের প্রথম লো কার্বন এমিশন অটোমোবাইল ইঞ্জিন সি বি সি ইঞ্জিন এবং ১৯৮১ সালে বিশ্বের প্রথম (কার নেভিগেশন) সিস্টেম ইন্টিটিউস করে। ১৯৮২ সালে হোন্ডা জাপানে সর্বপ্রথম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি হিসেবে নর্থ আমেরিকায় ভিগেল প্রোডাকশন শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে হোন্ডা মোটরসাইকেল অটোমোবাইল এবং পাওয়ার প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এর পাশাপাশি, কম্প্যাক্ট এয়ারক্রাফ্ট ও জেট ইঞ্জিন নিয়ে রিসার্চ করতে শুরু করে।
পরবর্তীতে হোন্ডা কোম্পানির মোটরসাইকেল এর পাশাপাশি গাড়ি, মেশিনারি, জেড বিমান ইত্যাদি তৈরিতে ও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়। সইচিরো হোন্ডা সব সময় বলতেন যে কোন সাফল্যের ১% কাজ বাকি ৯৯ শতাংশই ব্যর্থতা। আর তার এই কথার মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে বুঝিয়ে গিয়েছেন শত ব্যর্থতা থেকেই সফলতার সিঁড়ি শুরু, তাই ব্যর্থ হয়ে দমে না গিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করাই হলো জীবনের এগিয়ে যাওয়ার মূল মন্ত।
হোন্ডা কোম্পানি কত বড়? এবং হোন্ডা কোম্পানির ইতিহাস চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক:
হোন্ডা একটা লম্বা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছেই এই নামটির মানে ছিল দুই চাকার মোটরসাইকেল। Reliability, build quality, এবং fuel efficiency এর কারণেই মূলত বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে মানুষ হোন্ডা বলতেই মোটরসাইকেল মনে করতো। এদিকে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের জন্য হোন্ডা বেশি জনপ্রিয় হলেও বিশ্বব্যাপী জাপানিজ এই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে অটোমোবাইল, মেরিন আউট বোর্ড মোটর, জেড ইঞ্জিন থেকে শুরু করে পার্সোনাল এয়ারক্রাফট এর জন্য ই সুপরিচিত। প্রায় আট দশক ধরে বিজনেস অপারেট করা কোম্পানিটি বর্তমানে গ্লোবাল মোটরসাইকেল মার্কেট এর ২৮ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে লিডিং পজিশনে এবং অটোমোবাইল মার্কেটের ষষ্ঠ সর্ববৃহৎ কোম্পানি হয়ে উঠেছে।
২০২১ – ২০২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি গ্লোবালি ১৭ মিলিয়নের ও বেশি মোটরসাইকেল এবং ৪ মিলেনের বেশি অটোমোবাইল সেল করেছে। এছাড়া লাইট এয়ারক্রাফট বিক্রির দিক থেকে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। হোন্ডা এয়ারক্রাফ্ট কোম্পানি। এর পাশাপাশি পাওয়ারপয়েন্ট সেগমেন্টেও ২০২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৬ মিলিয়ন এর বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি করেছিল। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোন্ডা কোম্পানি মোট দুই লাখেরও বেশি কর্মী কর্মরত রয়েছে। আমাদের আজকের আয়োজনে আপনাদের জানাবো মাল্টি সেগমেন্টে বিজনেস অপারেট করা হোন্ডা আদতে কত বড়?
২০২১ – ২০২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি গ্লোবালি ১৭ মিলিয়নের ও বেশি মোটরসাইকেল এবং ৪ মিলেনের বেশি অটোমোবাইল সেল করেছে। এছাড়া লাইট এয়ারক্রাফট বিক্রির দিক থেকে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। হোন্ডা এয়ারক্রাফ্ট কোম্পানি। এর পাশাপাশি পাওয়ারপয়েন্ট সেগমেন্টেও ২০২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৬ মিলিয়ন এর বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি করেছিল। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোন্ডা কোম্পানি মোট দুই লাখেরও বেশি কর্মী কর্মরত রয়েছে। আমাদের আজকের আয়োজনে আপনাদের জানাবো মাল্টি সেগমেন্টে বিজনেস অপারেট করা হোন্ডা আদতে কত বড়?
আইএনসি এবং জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি জয়েন্ট ভেঞ্চারে ফিফটি ফিফটি শেয়ার হোল্ডিং টেক্সচারে Ge Honda aero engines LLC প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালে হোন্ডার পাওয়ার প্রোডাক্ট সেগমেন্টের ১০০ মিলিয়ন ইউনিট। এবং ২০১৪ সালের মোটর সাইকেল সেগমেন্টের প্রোডাকশন ৩০০ মিলিয়ন এর ইউনিট মাইলফলওতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
সে বছর কোম্পানিটি প্রায় ১১৫ বিলিয়ন ডলারের সেলস রিভিনিউ জেনারেট করে। ২০১৫ সালে হোন্ডা এয়ারক্রাফ্ট কোম্পানি ম্যানুফ্যাকচার করা হোন্ডা জেড বিমান ফেডারেল এডমিনেশন এর কাছ থেকে টাইপ সার্টিফিকেশন সংগ্রহের মাধ্যমে ডেলিভারি শুরু করে। ২০১৬ সালে হোন্ডার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড অটোমোবাইল প্রোডাকশন এবং ২০১৭ সালে সুপার কাপ সিরিজের মোটরসাইকেল প্রোডাকশন ১০০ মিলিয়ন ইউনিটের মাইলফলকে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। ২০১৮ সালে হোন্ডা জেডরের প্রিমিয়াম ভার্সন হোন্ডা জেট এলিট উন্মুক্ত বা উদ্বোধন করা হয়। সে বছর হোন্ডার মোট সেলস রেভিনিও এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২০ সালে হোন্ডা তাদের অটোমোবাইল সেগমেন্টে প্রথম ইলেকট্রিক কার Honda e লাঞ্চ করে এবং ২০২১ সালে বিশ্বের প্রথম লেভেল থ্রি হোন্ডা লেজেন্ড এর সেলস শুরু হয়।
সবছর শেষে কোম্পানিটির রেভিনিউ কিছুটা কমে প্রায় ১২৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলার এ নেমে আসে। যদিও ২০২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২ অর্থবছরে, হোন্ডার অভার অল সেলস-এর পরিমাণ বেশি ছিল। তবে রাশিয়ান ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে গ্লোবাল প্যান্ডেমিক এর কারণে সে বছর কোম্পানিটির রেভিনিউ ১২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। হোন্ডা মূলত মোটরসাইকেল অটোমোবাইল এবং পাওয়ার প্রোডাক্ট এই তিনটি সেগমেন্টে তাদের বিজনেস অপারেট করে থাকে। হোন্ডার সবচাইতে বড় সেগমেন্ট হলো মোটরসাইকেল সেক্টর, ১৯৬৮ সাল থেকে হোন্ডা মটর কোম্পানি লিমিটেড যাত্রা শুরুর পর থেকে এযাবৎকালে ৪৪০ মিলিয়ন ইউনিট মোটরসাইকেল সেল করেছে। গ্লোবালি ২১ টি দেশে কোম্পানিটির মোট ৩৫টি মোটরসাইকেল প্রোডাকশন ফেসিলিটি তে প্রতিবছর ২০ মিলিয়ন ইউনিট মোটরসাইকেল produce করে।
এছাড়াও সেলসের দিক থেকে ৩০০০০ টি সেলস আউটলেটস এর মাধ্যমে ২০২১ অর্থবছরেও কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী মোট ১৫ মিলিয়ন প্লাস ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি করেছেন। যেখানে বিশ্বের আরেক জনপ্রিয় মোটরসাইকেল ব্রান্ড ইয়ামাহা মাত্র ৪ মিলিয়ন ইউনিট এর বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি করেছিলো। এমনকি ২০২২ সালে প্রথম দশ মাসে হোন্ডা মোট ১৪.৫ মিলিয়ন ইউনিট মোটরসাইকেল বিক্রি করে ২৮ শতাংশ গ্লোবাল মার্কেট শেয়ার নিয়ে, গ্লোবাল মোটরসাইকেল মার্কেট লিড করছে। যা পরবর্তী তিন মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার কোম্পানি ( হিরো মটরস) (Yadea) এবং (ইয়ামাহা) সম্মিলিত ১৩ মিলিয়ন ইউনিট মোটরসাইকেল সেলস এর থেকেও বেশি। হোন্ডার অটোমোবাইল সেগমেন্টটি যাত্রা শুরু করে ১৯৬২ সালে হোন্ডা এস ফাইভ হান্ড্রেড স্পোর্টস কার মডেল টি রিলিজ করার মাধ্যমে। বিগত ছয় দশক ধরে অটোমোবাইল সেগমেন্টে বিজনেস অপারেট করা হুন্ডা ২০২১ অর্থবছর এ প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন ইউনিট অটো মোবাইল বিক্রি করার মাধ্যমে বিশ্বের ষষ্ঠ সর্ববৃহৎ অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন ধরনের মেরিন ও জেড ইঞ্জিন ছাড়াও হোন্ডা বিভিন্ন রেঞ্জের জেনারেটর ইঞ্জিন ও কনজিউমার ইকুইপমেন্ট ও ম্যানুফ্যাকচার করে। যা তাদের পাওয়ার প্রোডাক্ট সেগমেন্টের অধীনে অপারেট করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি, হসপিটাল, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও পাওয়ার ব্যাকআপ দেয়ার জন্য হোন্ডার ম্যানুফ্যাকচার করা জেনেটার গুলো ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি হোন্ডার তৈরি পোর্টেবল জেনারেটরগুলো পিকনিক ক্যাম্পিং ও লং টুর এর মতো বিভিন্ন পারপাসে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্পেসিফিকেশন ও রেঞ্জে লন মোর্স ও ট্রিমারের পাশাপাশি, বিভিন্ন রেঞ্জের ওয়াটার পাম্প ও সেল করে হোন্ডা। ইকুইপমেন্ট এর পাশাপাশি সাত দশক ধরে হোন্ডা পেশার ওয়াসার রেসকিও কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট সহ তিন হাজারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট এপ্লিকেশনের জন্য। ৬টি বেসিক সিরিজের ৩০ টি মডেলের ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচার করছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্ট এর ইঞ্জিন হিসেবে হোন্ডার তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহার করছে।
সর্বশেষ কথা:-
তো পাঠক কেমন লাগলো হোন্ডা অটোমোবাইল কোম্পানি লিমিটেড এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরে? যদি ভালো লেগেই থাকে তাহলে কিন্তু কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাবেন। আর আপনি যদি এমনি আনকমন এবং ইন্টারেস্টিং পোস্ট পড়তে পছন্দ করেন তাহলে সেটিও কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাবেন। আর পোস্টটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কেউ জানার সুযোগ করে দিতে পারেন। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি দেখাবে পরবর্তী কোন ইন্টারেস্টিং আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখুন এবং ভালো থাকুন ধন্যবাদ।